স্বর্গ ভ্রমণ - ভু স্বর্গ
দিন গুলো কিভাবে কেটে যায়। মনে হচ্ছে এই তো কদিন আগেই ঘুরে আসলাম এই সুন্দর জায়গা গুলো থেকে। আসলে যে সময়ের কাটা দুটো আর ক্যালেন্ডারের পাতা গুলো ৪ বছর পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু আজও দিন গুলো রেইনফরেস্টের মতই সজীব হয়ে আছে মনে। খুব সুন্দর একটা ভ্রমণ ছিল। সেই ভয়ংকর সুন্দর রাস্তা গুলোর আঁকা বাঁকা পথ মন আর মস্তিষ্কে যে ছাপ ফেলেছে তা ওই গিরিখাত গুলোর মতই গভীর। ভয়ংকরকে দূরে ঠেলে শুধু সুন্দরের টানেই বার বার যেতে ইচ্ছা করে। সোলাং ভ্যালিতে হাটু অবধি বরফে গেঁথে স্নো ম্যান বানানো কিংবা দাল লেকে বিকেলে সিখারায় ভ্রমণ। আর আমাদের গাইড + ড্রাইভার ফিরোজের পেন্ড্রাইভের সেই একটাই গান “জাব তাক হায় জান” ,হাহাহাহা। আহ্ লেখাটা লিখতে গিয়ে বুকে ধিপধিপানি ব্যথা উঠে গেল, কি জানি বলে – Sweet pain!
দিল্লি থেকে ভলভোতে কুল্লু হয়ে মানালি
ভাড়া ৮০০ রূপি (২০১২-১৩ সালে)। কলকাতা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়,তবে আমরা দিল্লী ঘুরে তারপর মানালি গিয়েছি।
বাস থেকে নেমেই কিছু ভাল হোটেল আছে। আমরা ” Hotel Yak” এ ছিলাম। লোকেশন ভাল। আশেপাশে রেস্টুরেন্ট আর কাপড়-চোপড়ের দোকান আছে। কেনাকাটা করতে চাইলে একটু দরদাম করে নিতে হবে,তবে দাম এমনিতেই তুলনামূলক অনেক কম।
মানালিতে বন বিহার ন্যাশনাল পার্ক, বৌদ্ধ মন্দির, দেবী টেম্পল, সোলাং ভ্যালি, কোঠি, গুলাবা মত আরো জায়গা আছে দেখার জন্য। বন বিহার পার্ক বাসস্টপেজের কাছে তাই সন্ধ্যা নামার আগে যেকোনো সময় দেখে নেয়া যায়। সিড়ি বেয়ে নিচে নামলেই পাবেন অসম্ভব সুন্দর তীব্র স্রোতের বিয়াস নদী। আমরা নভেম্বরের শেষে গিয়েছিলাম। ২ দুই দিন আগেই মানালিতে বরফ পড়ে তাই সোলাং ভ্যালিতে আমরা অনেক বরফ পেয়েছিলাম। ক্যাবল কারে করে পাহাড়ের উপর স্নো পয়েন্টে উঠি, ৫০০ রুপি নিয়েছিল। এখানে প্যারাগ্লাইডিং,প্যারাসুটিং, জোরবিং, ঘোড়া চড়া করতে পারেন চাইললে।
রাতে অনেক ঠাণ্ডা পড়ায় রাস্তায় লোকজন আগুন জ্বালিয়ে গোল করে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়ায়। এখানে খুব জনপ্রিয় মোমো। শীতের রাতের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে যে মোমো খেতে এতো মজা লাগে আগে জানা ছিল না।
কাশ্মীর – মানালি থেকে রোটাং পাস হয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু নভেম্বরের ১৫ তারিখের পরে ওই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই আমরা অন্য পথে গিয়েছিলাম। একটু সময় বেশি লাগে এটাতে।
বাস ভাড়া- ৬০০ রূপি(২০১২-১৩ সালে)।এই বাস গুলো জাম্মু পর্যন্ত যায়। জাম্মু থেকে ৪০০০ রূপিতে আমরা ১০ সীটের মাইক্রো ভাড়া করি। শ্রীনগর পৌছতে সময় লেগেছে ৮/৯ ঘন্টা।
মানালি থেকে এই পথে কাশ্মীর যেতে মোট সময় লেগেছে প্রায় ২২/২৩ ঘন্টা। পাহাড়ি ভয়ংকর রাস্তা। রোটাং পাস হয়ে সময় অনেক কম লাগে।
কাশ্মির পৌছাতে রাত ৮টা বেজে যায়। আমাদের এই ড্রাইভারটা বেশ ভাল ছিল। কোথায় থাকবো বা কোন লোকেশন আমাদের জন্য সহজ হবে বুঝতে পারছিলাম না। সে আমাদেরকের দুর্গানাগ,দাল গেট এর কাছে নিয়ে গেলো। অনেক খোজার পরে দাম ও রুম দেখে হোটেল রক’স এ উঠলাম আমরা। যেহেতু কাশ্মীর আমাদের হঠাৎ করেই যাওয়া,পুরো প্লানের বাইরের অংশ,তাই বাজেট কম ছিল। হোটেল খুব বেশি ভাল ছিল না, কোন ভাবে রাত কাটানো যাবে এমন। আমরা শুধু দেখছি পরিষ্কার কি না আর হিটার আছে কি না,কারন ডিসেম্বরের ২/৩ তারিখ, অনেক ঠান্ডা,সচল হিটার জরুরি ছিল। হোটেলের লোকেশন ভাল ছিল। পাশে খাবারের রেস্টুরেন্ট, দাম সাধ্যের মধ্যে,স্বাদেও ভাল। আর গাড়িও পাওয়া যায় সহজে। এখানে নেমেই ট্যুরিস্টদের একটা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে পারে সেটা হলো “দালাল চক্র”। জোকের মতো পিছনে লেগে থাকে যতক্ষণ কোন হোটেলে না উঠা হয়। তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাদের লিস্টের একটা হোটেলে ট্যুরিস্টদের উঠিয়ে দিতে কারন তারা একটা কমিশন পায়। কিন্তু তার জয় হোটেলে অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাড়ার বেশি ভাড়া আদায় করে। আমারা অনেক কষ্টে দালালের পিছু ছুটিয়ে ছিলাম। তবে পরের দিন সকালে যখন সিটি ট্যুরের জন্য গাড়ি ভাড়া করছিলাম আবারো সেই দালাল এসে হাজির, এক রাশ গালিগালাজ নিয়ে। ভাগ্য ভাল ছিল আমরা অনেকজন একসাথে ছিলাম আর ওখানে লোকজনও এ লোক সম্পর্কে জানতো। যাইহোক, অবশেষে ফিরোজকে আমরা পেলাম,আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড।
কাশ্মীর মোঘলদের বাগানের শহর। মোঘল ও অন্যান্য রাজ-রাজাদের তৈরিকৃত বাগান কাশ্মীরের সৌন্দর্য আরো বাড়িতে দিয়েছে। নিশাত গার্ডেন, শালিমার গার্ডেন, মোঘল গার্ডেন, চশ্মে শাহি গার্ডেন, পরি মহল আর সেগুলোর কাছেই আছে দাল লেক। গার্ডেন গুলোয় ফটোগ্রাফার থাকে আর তাদের সাথে থাকে কাশ্মীরি পোশাক। ইচ্ছা করলে সেগুলো পরে ছবি তোলা যায়,তবে তার জন্য কিছু মূল্য দিতে হয়। ছবি ওয়াশ করে দিতে মিনিট ২০- ২৫ সময় নেয়। বিকেলে দাল লেকে শিখারা (কাশ্মীরি নৌকা) নিয়ে ভ্রমনের মজা আলাদা। স্নিগ্ধ বাতাস,সাথে দাল লেকের পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে দিব্বি ঘন্টা খানেক কেটে যায়। তবে শিখারা ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিতে হবে,কারন ট্যুরিস্ট দেখে সবাই দ্বিগুণ তিনগুণ দাম হেঁকে বসে। এপ্রিল-মে মাসে টিউলিপ ও আপেল বাগান দেখা যায় এখানে আর দাল লেকে ফুল বোঝাই নৌকা কিন্তু আমরা ডিসেম্বরে যাওয়ায় দেখতে পাইনি।
দিল্লি থেকে ভলভোতে কুল্লু হয়ে মানালি
ভাড়া ৮০০ রূপি (২০১২-১৩ সালে)। কলকাতা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়,তবে আমরা দিল্লী ঘুরে তারপর মানালি গিয়েছি।
বাস থেকে নেমেই কিছু ভাল হোটেল আছে। আমরা ” Hotel Yak” এ ছিলাম। লোকেশন ভাল। আশেপাশে রেস্টুরেন্ট আর কাপড়-চোপড়ের দোকান আছে। কেনাকাটা করতে চাইলে একটু দরদাম করে নিতে হবে,তবে দাম এমনিতেই তুলনামূলক অনেক কম।
মানালিতে বন বিহার ন্যাশনাল পার্ক, বৌদ্ধ মন্দির, দেবী টেম্পল, সোলাং ভ্যালি, কোঠি, গুলাবা মত আরো জায়গা আছে দেখার জন্য। বন বিহার পার্ক বাসস্টপেজের কাছে তাই সন্ধ্যা নামার আগে যেকোনো সময় দেখে নেয়া যায়। সিড়ি বেয়ে নিচে নামলেই পাবেন অসম্ভব সুন্দর তীব্র স্রোতের বিয়াস নদী। আমরা নভেম্বরের শেষে গিয়েছিলাম। ২ দুই দিন আগেই মানালিতে বরফ পড়ে তাই সোলাং ভ্যালিতে আমরা অনেক বরফ পেয়েছিলাম। ক্যাবল কারে করে পাহাড়ের উপর স্নো পয়েন্টে উঠি, ৫০০ রুপি নিয়েছিল। এখানে প্যারাগ্লাইডিং,প্যারাসুটিং, জোরবিং, ঘোড়া চড়া করতে পারেন চাইললে।
রাতে অনেক ঠাণ্ডা পড়ায় রাস্তায় লোকজন আগুন জ্বালিয়ে গোল করে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়ায়। এখানে খুব জনপ্রিয় মোমো। শীতের রাতের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে যে মোমো খেতে এতো মজা লাগে আগে জানা ছিল না।
কাশ্মীর – মানালি থেকে রোটাং পাস হয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু নভেম্বরের ১৫ তারিখের পরে ওই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই আমরা অন্য পথে গিয়েছিলাম। একটু সময় বেশি লাগে এটাতে।
বাস ভাড়া- ৬০০ রূপি(২০১২-১৩ সালে)।এই বাস গুলো জাম্মু পর্যন্ত যায়। জাম্মু থেকে ৪০০০ রূপিতে আমরা ১০ সীটের মাইক্রো ভাড়া করি। শ্রীনগর পৌছতে সময় লেগেছে ৮/৯ ঘন্টা।
মানালি থেকে এই পথে কাশ্মীর যেতে মোট সময় লেগেছে প্রায় ২২/২৩ ঘন্টা। পাহাড়ি ভয়ংকর রাস্তা। রোটাং পাস হয়ে সময় অনেক কম লাগে।
কাশ্মির পৌছাতে রাত ৮টা বেজে যায়। আমাদের এই ড্রাইভারটা বেশ ভাল ছিল। কোথায় থাকবো বা কোন লোকেশন আমাদের জন্য সহজ হবে বুঝতে পারছিলাম না। সে আমাদেরকের দুর্গানাগ,দাল গেট এর কাছে নিয়ে গেলো। অনেক খোজার পরে দাম ও রুম দেখে হোটেল রক’স এ উঠলাম আমরা। যেহেতু কাশ্মীর আমাদের হঠাৎ করেই যাওয়া,পুরো প্লানের বাইরের অংশ,তাই বাজেট কম ছিল। হোটেল খুব বেশি ভাল ছিল না, কোন ভাবে রাত কাটানো যাবে এমন। আমরা শুধু দেখছি পরিষ্কার কি না আর হিটার আছে কি না,কারন ডিসেম্বরের ২/৩ তারিখ, অনেক ঠান্ডা,সচল হিটার জরুরি ছিল। হোটেলের লোকেশন ভাল ছিল। পাশে খাবারের রেস্টুরেন্ট, দাম সাধ্যের মধ্যে,স্বাদেও ভাল। আর গাড়িও পাওয়া যায় সহজে। এখানে নেমেই ট্যুরিস্টদের একটা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে পারে সেটা হলো “দালাল চক্র”। জোকের মতো পিছনে লেগে থাকে যতক্ষণ কোন হোটেলে না উঠা হয়। তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাদের লিস্টের একটা হোটেলে ট্যুরিস্টদের উঠিয়ে দিতে কারন তারা একটা কমিশন পায়। কিন্তু তার জয় হোটেলে অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাড়ার বেশি ভাড়া আদায় করে। আমারা অনেক কষ্টে দালালের পিছু ছুটিয়ে ছিলাম। তবে পরের দিন সকালে যখন সিটি ট্যুরের জন্য গাড়ি ভাড়া করছিলাম আবারো সেই দালাল এসে হাজির, এক রাশ গালিগালাজ নিয়ে। ভাগ্য ভাল ছিল আমরা অনেকজন একসাথে ছিলাম আর ওখানে লোকজনও এ লোক সম্পর্কে জানতো। যাইহোক, অবশেষে ফিরোজকে আমরা পেলাম,আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড।
কাশ্মীর মোঘলদের বাগানের শহর। মোঘল ও অন্যান্য রাজ-রাজাদের তৈরিকৃত বাগান কাশ্মীরের সৌন্দর্য আরো বাড়িতে দিয়েছে। নিশাত গার্ডেন, শালিমার গার্ডেন, মোঘল গার্ডেন, চশ্মে শাহি গার্ডেন, পরি মহল আর সেগুলোর কাছেই আছে দাল লেক। গার্ডেন গুলোয় ফটোগ্রাফার থাকে আর তাদের সাথে থাকে কাশ্মীরি পোশাক। ইচ্ছা করলে সেগুলো পরে ছবি তোলা যায়,তবে তার জন্য কিছু মূল্য দিতে হয়। ছবি ওয়াশ করে দিতে মিনিট ২০- ২৫ সময় নেয়। বিকেলে দাল লেকে শিখারা (কাশ্মীরি নৌকা) নিয়ে ভ্রমনের মজা আলাদা। স্নিগ্ধ বাতাস,সাথে দাল লেকের পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে দিব্বি ঘন্টা খানেক কেটে যায়। তবে শিখারা ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিতে হবে,কারন ট্যুরিস্ট দেখে সবাই দ্বিগুণ তিনগুণ দাম হেঁকে বসে। এপ্রিল-মে মাসে টিউলিপ ও আপেল বাগান দেখা যায় এখানে আর দাল লেকে ফুল বোঝাই নৌকা কিন্তু আমরা ডিসেম্বরে যাওয়ায় দেখতে পাইনি।
পেহেল্গাম,সোনমার্গ অপূর্ব সুন্দর। এখানে বিভিন্ন নামে ভ্যালিও আছে- সুইজারল্যান্ড ভ্যালি,আরু ভ্যালি,বেতাব ভ্যালি। এ জায়গা গুলোতে চাইলে ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ের উপরে ওঠা যায়,তবে পায়ে হেটেও যাওয়া যায়।
কাশ্মীরে অনেক গুলো মসজিদ ও মাজার আছে এগুলো দেখতে পারেন।
এবার আসি কাশ্মীরি খাবারের কথায়। ইশ্ মনে করতেই জিভে পানি চলে আসলো। পেগেল্গামের বিরিয়ানি স্বাদ আজো যেনো মুখে লেগে আছে। হযরতবাল মসজিদের পাশে খাবার দোকানের সারি দেখেই অর্ধ ভোজন হয়ে যায় অবস্থা। গুশতাবা,দম আলু,ইয়াখনি, হারিশ,আব গোস্ত, কাশ্মীরি পোলাও আর সবচেয়ে মজা রোগান জোশ।
এছাড়া রাস্তায় রাস্তায় ফালুদা, লবন চা, কেহ্ওয়া(জাফ্রান চা), পাতিশা,পাকোড়া তো আছেই।
মুঘল দরবার নামের এক রেস্টুরেন্টে আমরা প্রতিদিন রাতের খাবার খেতাম। ওদের খাবার খুব মজা আর সার্ভিস এতো ভাল ছিল যে আমরা আর কোথাও রাতে যেতাম না।
২ দিন ৩ রাত শ্রীনগরে কাটিয়ে সকালে গাইড ফিরোজের গাড়িতে জাম্মু রওনা দেই।
জাম্মু থেকে ট্রেনে দিল্লীতে রওনা দেই।
গুলমার্গ, লাদাখ শ্রীনগর থেকে অন্য স্পট গুলো থেকে দূরে। হাতে সময় কম থাকায় আমাদের আর যাওয়া হয়নি। তবে পরের ভারত ভ্রমণে এ গুলো বাদ পড়বে না আশা করি।
Comments
Post a Comment