যেসব কারণে রাতজাগা মানুষেরা সবার চাইতে আলাদা এবং বুদ্ধিমান 



দিনের বেলায় কাজে ব্যস্ত থাকি আমরা সবাই। ধরে নেই দিনের আলো ছাড়া কাজ করা কষ্ট হবে। কিন্তু আসলে কি তাই? আসলেই কি দিনের বেলায় কাজ ভালো হয়? নাকি রাত্রের বেলায় মানুষের সৃজনশীলতা যায় বেড়ে, কাজে যোগ হয় নতুন মাত্রা?
চাঁদের আলো যুগ যুগ ধরে মানুষকে দিয়ে আসছে এমন অনুপ্রেরণা, যা সূর্যের আলোয় যায় উবে। শিল্পী-সাহিত্যিকের কল্পনায় তা রঙ চড়ায়। তখন মানুষ করতে পারে এমন কিছু, চোখ ধাঁধানো দিনের আলোয় যা মনে হয় নিতান্তই অবাস্তব। এমন সব কারণে রাত্রে জেগে থাকার মত কাজ করেন তারাই, যারা রাত্রির মহিমা বোঝেন। রাতের বেলায় কাজ করার সুবিধাকে নিজের মত করে ব্যবহার করেন তারা। তাদের আই কিউও হয়ে থাকে অন্যদের চাইতে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আইকিউ বেশি তারা কম আইকিউ-এর মানুষের চাইতে রাত জাগেনও বেশি।
এর কারণ কী? কারণ হলো সাধারণ মানুষের মস্তিষ্ক রাতের বেলা ঘুমাতে অভ্যস্ত থাকে, তাদের মস্তিষ্ক তৈরিও হয় এমনভাবে যাতে রাতের ঘুম তাদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্বাভাবিকের চাইতে বেশি বুদ্ধিমত্তার মানুষ এই নিয়মের শৃঙ্খলে আটকা থাকেন না বরং নিজের সুবিধামত সময়টার সদ্ব্যবহার করে থাকেন। প্রচলিত নিয়ম ভাঙার একটা অবচেতন ইচ্ছে থেকেও তাদের রাত জাগার প্রবণতা দেখা যায়।
এই গবেষণায় ২০ এর কোঠায় থাকা মানুষের আইকিউ বনাম ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় হলো এমন :
কম বুদ্ধিমত্তা (IQ < 75)
কর্মদিবস রাত ১১.৪১টা থেকে সকাল ৭.২০টা
ছুটির দিন রাত ১২.৩৫টা থেকে সকাল ১০.০৯টা
সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (90< IQ < 110)
কর্মদিবস রাত ১২.১০টা থেকে সকাল ৭.৩২টা
ছুটির দিন রাত ১.১৩টা থেকে সকাল ১০.১৪টা
বেশি বুদ্ধিমত্তা (IQ > 125)
কর্মদিবস রাত ১২.২৯টা থেকে সকাল ৭.৫২টা
ছুটির দিন রাত ১.৪৪টা থেকে সকাল ১১.০৭টা
যাদের আই কিউ ৭৫ এরও কম তারা সাড়ে ১১টার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার যাদের আই কিউ ১২৫ এর বেশি তারা সাড়ে বারোটার পর ঘুমাতে যায়। এটা মোটেই কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। সারাদিনে যা ঘটে তা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা, তা থেকে শিক্ষা নেবার সময় হলো মধ্যরাত। শুধু তাই নয়, তারা করতে পারেন এমন কিছু কাজ যা সবাই পারে না।
কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবার মোক্ষম সময়
সারা দিন কাজের ভিড়ে, পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের কথার ঝলকে ছিঁড়ে যায় আমাদের চিন্তার সুতো। স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায় অসাধারণ সব আইডিয়া। কিন্তু রাত্রির নিরবিচ্ছিন্ন নীরবতায় তা হবার কোনো ভয় নেই। শুধু তাই নয়, এ সময়ে চিন্তাভাবনা করার ক্ষেত্রে নিয়মের ভয়টা যেন যায় কমে। সাধারণের গন্ডি ছাড়িয়ে চিন্তাভাবনার গণ্ডি আরও ছড়িয়ে যেতে থাকে।
তারা প্রচলিত নিয়মের ঊর্ধ্বে যেতে পছন্দ করেন
রাত জাগার ব্যাপারটাকে সব সময়ের সমাজের চোখে নিয়মের ব্যতিক্রম বলে ধরা হয়। রাত জাগা মানুষদের ভালো চোখে দেখা হয় না। কিন্তু সমাজের ধরাবাঁধা এসব নিয়মের বাইরে যাওয়া মানুষদের মাঝেই এক সময়ে জন্মায় এমন সব বৈশিষ্ট্য, যার মাধ্যমে তারা হয়ে ওঠেন অনন্য। তাদের হাত ধরেই সমাজে আসে অনেক পরিবর্তন।
তারা হয়ে থাকেন অনেক বেশি উদার
রাত জাগা মানুষেরা এমন কিছু ব্যাপারে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, যা জীবনের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও প্রশস্ত করে। অনেক কিছুকেই তারা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করেন, কেবল নিয়মনীতি দিয়ে নয়। এতে তারা হয়ে ওঠেন অন্যদের চাইতে বেশি উদার মনের অধিকারী।
তারা হয়ে থাকেন অনেক কর্মক্ষম
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে অনেক কাজ করা যায় সত্যি, কিন্তু রাত জেগে থাকলে তখনও অনেক বেশি কাজ হয়ে যায় সহজেই। কোনো ঝঞ্ঝাট থাকে না তখন, কেউ বিরক্ত করতে আসে না কাজের মাঝে। তাই কাজও হয় মসৃণ গতিতে।

Comments

Popular posts from this blog

আমাজান এর জঙ্গল----Amazon jungle

গ্রামের বাড়ি