ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার কাজ
(বিভাগঃ ঘরে বসে আয়)
ফ্রিল্যান্সিং –
শব্দটি শুনলে অনেকেরই মাথায় প্রথম যে ব্যাপারটা আসে, হয়তো এটা প্রোগ্রামার বা
ডিজাইনারদের জন্য কিছু। হয়তো কিছুটা সত্যি, কারণ এখন পর্যন্ত আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের
মানুষরাই ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রাধান্য নিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং
মার্কেটপ্লেস, সবচেয়ে বেশি কাজ করছে টেকি ফ্রিল্যান্সাররা। তবে আসলেই কি তাই? মোটেও
না আইটি ছাড়া আর আরেকটি কাজের জগত যার চাহিদা অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে অনেক।
সেটি হল ব্যবসায় এবং ব্যবস্থাপনা।
দুই পর্বের
ধারাবাহিক লেখায় প্রথম পর্বে “ইল্যান্স” মার্কেটপ্লেসে ব্যবসায়
ব্যবস্থাপনার ফ্রিল্যান্স কাজ নিয়ে আলোচনা করা হল। আগামী পর্বে হবে
“ওডেস্ক”মার্কেটপ্লেস নিয়ে।
এ পর্বের
লেখাটিতে ইল্যান্সে ব্যবসা ব্যবস্থাপনার কাজের চাহিদা, কিভাবে পাওয়া যায় এবং
অন্যান্য টিপস নিয়ে লিখেছেন “ইল্যান্স বাংলাদেশের” কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর
মামুন খান।
ইল্যান্সে ব্যবসায়
সম্পর্কিত কি কি পাওয়া যায়?
এই ক্যাটাগরিতে
প্রধানত ২টি বিভাগ রয়েছে – মার্কেটিং এবং কনসাল্টিং। কনসাল্টিং বিষয়ক কাজগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি চাহিদা আছে
অ্যাকাউন্টিং, ফাইনান্সিয়াল প্ল্যানিং, ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং, ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং
ইত্যাদি। আর মার্কেটিং বিষয়ক কাজগুলোর মাঝে আছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল
মার্কেটিং, মার্কেটিং এবং বিজনেস প্ল্যান তৈরি ইত্যাদি। এর মাঝে আপনি আপনার দক্ষতা
এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। যেমন, আপনার যদি বিবিএ অথবা
অ্যাকাউন্টিং ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে, আপনি কুইক-বুক বা অন্য ভালো একটি অ্যাকাউন্টিং
প্রোগ্রাম শিখে নিয়ে সহজেই শুরু করে দিতে পারেন অ্যাকাউন্টিং সার্ভিস দেয়া। আপনার
যদি ব্যবসায় পরিকল্পনা তৈরি নিয়ে অভিজ্ঞতা থাকে (যেটা কিনা বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় বিভাগে দ্বিতীয়-তৃতীয় বর্ষেই শেখানো হয়) তাহলে আপনি শুরু
করে দিতে পারেন বাইরের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা।
উদাহরণ দিয়ে যদি
বলি, ধরুন কানাডার একটি কোম্পানির লোন দরকার, এবং তার জন্য ব্যাংকে বিজনেস প্ল্যান
জমা দিতে হবে। এই কাজ কানাডার কেউ করে দিতে হাজার হাজার ডলার নিবে। যেহেতু
কোম্পানি নতুন, তাই অনেকেই কাজটি স্বল্পমূল্যে বাইরের কোন দেশ থেকে করিয়ে নিতে
চায়। তখনি কাজগুলো আসে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে। যদি দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনিও পেয়ে যেতে পারেন এমনি একটি কাজ। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে
এভাবেই কিন্তু অনেকে ব্যবসায় সম্পর্কিত কাজ করে থাকে। শুধু যে বিজনেস প্ল্যান, তা
কিন্তু না। এভাবে পেতে পারেন ফেসবুক মার্কেটিং এর কাজ, ইমেইল মার্কেটিং এর কাজ ইত্যাদি।
এ ধরনের কাজে আয়
কেমন হতে পারে?
আমাদের
মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ঘণ্টা-প্রতি আয় হয় যেই বিভাগে,
তা কিন্তু ব্যবসায় ৮ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ইল্যান্সে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের
ঘণ্টা-প্রতি গড় আয় যেখানে ৮ ডলার, যেখানে ব্যবসায় ৭ ব্যবস্থাপনা বিভাগের
ফ্রিল্যান্সাররা ঘণ্টা-প্রতি আয় করছেন প্রায় ১৯ ডলার। অপরদিকে মার্কেটিং নিয়ে যারা
কাজ করছেন, তাদের ঘণ্টা-প্রতি গড় আয় হল প্রায় ৯ ডলার। শুধু সেলস এবং মার্কেটিং
নিয়ে কাজ করেন, এমন এক ফ্রিল্যান্সার শুধু ২০১২ সালেই আয় করেছেন ১৮,২০০ ডলার। অপরদিকে
ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন এমন এক ফ্রিল্যান্সার ২০১২ সালে আয় করেছেন ৬,০০০ ডলার। শুধু
সেলস এবং মার্কেটিং বিভাগেই বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা সবাই মিলে ২০১২ সালে আয়
করেছে প্রায় ১,৮৫,০০০ ডলার।
কাদের জন্য ব্যবসায়
ব্যবস্থাপনা এবং বিপণন জাতীয় কাজ?
ব্যবসায় শিক্ষা
নিয়ে পড়াশোনা আছে, অথবা বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করছেন, এমন ফ্রিল্যান্সাররা হতে
পারেন ব্যবসায় বিভাগের কাজগুলোর জন্য আদর্শ। এর মূল কারণ হল, আমাদের দেশের বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যা যা শেখানো হয়, মূলত সেগুলোই কিন্তু অনলাইন মার্কেটপ্লেসে
করা যায়। যেমন, মার্কেট রিসার্চ করে মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করা, বিজনেস প্ল্যান
তৈরি করা, অ্যাকাউন্টিং এর বিভিন্ন হিসেব মিলিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা, কারও বিজনেস
মিটিংয়ের জন্য প্রেজেন্টেশন তৈরি করে দেয়া, ইত্যাদি বিষয়ে কিন্তু আমাদের দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থীরাযথেষ্ট দক্ষ। এবং ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতাও কিন্তু
তাদের কম নয়। এই দক্ষতা যদি তারা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিয়ে আসতে পারে, তাহলে
উপার্জনের দারুণ একটি পথ তৈরি তো হবেই, তার সাথে হয়ে যাবে আন্তর্জাতিক কোম্পানি
অথবা ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা।
তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি, শুধু উপার্জনটাই নয়, এর ফল অনেক সুদূরপ্রসারী
হতে পারে। যেমন, আমাদের দেশের বাণিজ্য বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী দেখা যায় পড়াশোনা শেষে
ভালো একটি চাকরি খুঁজে পায়না, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি। অনেকেই দেখে যে ইন্টার্ভিউ
বোর্ডে গেলেই অভিজ্ঞতা চায়। সেক্ষেত্রে
তারা যদি পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত ১০-১৫ ঘণ্টা যদি ফ্রিল্যান্স কাজ করে,
তাহলে স্নাতক শেষ করতে করতে তাদের হয়ে যাবে ১-২ বছরের আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার
অভিজ্ঞতা। এবং সেটা কিন্তু যে কারও ক্যারিয়ারে হতে পারে দারুণ একটি সংযোজন। আর যারা চাকরি না করে নিজেই কিছু
করতে চায়, তাদের এই ১-২ বছরে যথেষ্ট মূলধন জমে যেতে পারে
যা দিয়ে তারা পরবর্তীতে নিজের কিছু দাঁড় করাতে পারবে, হতে
পারে সেটা তার সব ক্লায়েন্ট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
কিভাবে আপনিও
ব্যবসায় সম্পর্কিত কাজগুলো করতে পারেন?
প্রথমেই বলবো
আপনি কোন কাজটি ভালো পারেন, কি ধরনের সার্ভিস আপনি অনলাইনে দিবেন তা আগে থেকেই ঠিক
করে নেয়া। আপনার দক্ষতা যদি হয় যোগাযোগ ও বিপণনে, তাহলে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া
মার্কেটিং শিখে নিতে পারেন। যদি আপনার মার্কেট রিসার্চ করে বিজনেস প্ল্যান বা
মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সেই কাজগুলোই আপনি
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে অবশ্য আপনাকে তেমন কোন কোর্স
করতে হবেনা, তবে চাইলে “বিজনেস প্ল্যান প্রো” নামের সফটওয়্যারটি শিখে নিতে পারেন,
তাহলে বিজনেস প্ল্যান তৈরি আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। যদি অ্যাকাউন্টিং
সম্পর্কিত কাজ পেতে চান, তাহলে “কুইক-বুক” সফটওয়্যারটি শেখা আপনার জন্য খুবই সহায়ক
হবে, কেননা ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে “কুইক-বুক” জানা অ্যাকাউন্টেন্টদের
অনেক চাহিদা রয়েছে।
তবে হ্যাঁ,
সবকিছুর উপরে যেটা দরকার সেটা হল ভালো ইংরেজি জ্ঞান। কারণ আপনি যখন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে
কাজ করবেন, আপনার এবং আপনার ক্লায়েন্টের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কিন্তু ইংরেজি
ভাষা। সেকারণে ভালো কাজ পেতে, এবং ক্লায়েন্টকে ভালোভাবে কাজ বুঝিয়ে দিতে ইংরেজি
ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।
কোথা থেকে শুরু
করবেন?
অনলাইনে ব্যবসায়
সম্পর্কিত কাজ পেতে ঘুরে আসতে পারেন বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত মার্কেটপ্লেসে, যেমন
আমাদের ইল্যান্স মার্কেটপ্লেসটিতে রয়েছে (www.elance.com)। আমাদের মার্কেটপ্লেসে প্রতিদিন প্রচুর ব্যবসায় ও বিপণন
সম্পর্কিত কাজ পোস্ট হয়ে থাকে। যেমন, ইল্যান্সে প্রতিদিন গড়ে বিপণন বিষয়ক কাজ
পোস্ট হয় প্রায় ১০০টি, এবং ব্যবসায় বিষয়ক কাজ পোস্ট হয় গড়ে ১৫-২০টি । কাজ শুরু
করতে প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হল www.elance.com–এ গিয়ে একটি ফ্রি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে, এবং প্রোফাইলটি আপনার নাম, ছবি,
পড়াশোনা এবং কাজের অভিজ্ঞতার তথ্য, ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে হবে। প্রোফাইল তৈরি হয়ে
গেলে আপনি ওয়েবসাইটটির “ফাইন্ড ওয়ার্ক” সেকশনে গেলেই দেখতে পাবেন প্রচুর জব লিস্ট
করা আছে। আপনি সেখান থেকেই ব্যবসায় সম্পর্কিত জবগুলোতে অ্যাপ্লাই করা শুরু করে
দিতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, অ্যাপ্লাই করার আগে অবশ্যই জবের বর্ণনা ভালোমতো পড়ে
নিবেন, এবং পড়ার পর যদি মনে হয় কাজটি আপনি পারবেন, তবেই অ্যাপ্লাই করবেন। আর
অ্যাপ্লাই করার সময় খেয়াল রাখবেন আপনার প্রপোজাল (কভার লেটার) যদি প্রফেশনাল হয়।
যদি আপনার অ্যাপ্লিকেশান ক্লায়েন্টের পছন্দ হয়, তাহলে আপনাকে সে কাজে সেই কাজটির জন্য
হায়ার করে নিবে, এবং এভাবেই শুরু হয়ে যাবে আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার।
Comments
Post a Comment