একজন বেকার । One unemployed

 একজন বেকার ।
                             --- মাসুদ আহমেদ



                                     



আজ আমি বেকার।পকেটে মাত্র ৬ টাকা ,২ টাকার বুট কিনেছি।অনেক সময় নিয়ে এটাই কুটকুট  করে খাচ্ছি।যত দেরিতে শেষ হবে,ততই ভালো।একটা করে খাচ্ছি।হাটছি আর খাচ্ছি,আগে জানতামনা হাটাতে এত মজা.সবাই গাড়ি,বাস,রিক্সাতে চড়ে,আমার দুই পাই আমার গাড়ি।ইস্ত্রী ছাড়া সার্ট,পান্ট। পানি দিয়ে টেনে টেনে ঠিক করেছি।

সকাল বেলা বাসা থেকে ১০ টাকা নিয়েছি,ছোট বোনের কাছ থেকে।খুব আস্তে চুপিসাড়ে টাকাটা নিয়েছি।যাতে মা টের  না পায়.জানতে পারলে লাথি,উষ্টা মারবে।কোনরকমে রুটি,চা খেয়ে বেরিয়ে পরেছি।২  টাকা বাস ভাড়া দিয়ে রমনায় এসেছি।পকেটে এখন ৬ টাকা,চারপাশে ছেলে,মেয়েরা। কেউ জড়াজড়ি করে বসা,কেউ আদর করতে ব্যস্ত। আমার তো কেউ নাই,একটা বেঞ্চ খুজছি বসার জন্য,একটা ভবগুরে শুয়ে আছে,পুরা বেঞ্চ দখল করে,দেশটা যে কি হলো,একটা চাকরি পাচ্ছি না,একটা কাজ খুব দরকার,চাকরিটা পেলেই কিছু কেনাকাটা দরকার। কত কিছু দরকার,২ তা সার্ট ,২ তা পেন্ট,একজোড়া সু,ছোট্ট একটা দেশ অথচ একটা চাকরি পাচ্ছি না,ছোট একটা দেশ কিন্তু গরিব।আমার মত,আচ্ছা এই দেশটা গরিব কেন?এই দেশটা যদি ইউরোপ এ হতো,না ইউরোপের অনেক দেশ গরিব।তাহলে মালেশিয়ার পাশে,না তাও না,মধ্যপ্রাচ্চ,না না একদম না,ঐসব অঞ্চলের মানুষের মাথা গরম,তাহলে মালেশিয়ার পাশে থাকলেই ভালো হতো,ঠান্ডা মাথা,ও তাই তো,বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড,লাওস,ভিয়েতনাম মালয়েশিয়া,ব্রুনাই,জাপান পুরা অঞ্চলটাই ঠান্ডা মাথার মানুষ,আর পাকিস্তান থেকে পুরা মধ্যপ্রাচ্চ গরম মাথার মানুষ।কারণ টা কি,ভাবছি আর ভাবছি।এত বড় হাতি,খায় লতাপাতা,তৃণ,স্বভাবেও শান্ত। আর সিংহ,বাঘ মাংশাসী,হয়েছে হিংস্র।ইয়েস-পাচ্চের লোকেরা খায় সবজি,মাছ,এজন্যই ওদের ঠান্ডা মাথা।ঠান্ডা মাথায় ভালো ভালো কাজ করা যায়,আর মধ্য প্রাচ্যে খায় কাবাব,মাংস,  পুরাই মাথা গরম,এজন্যই ওখানে এতো হানাহানি।মাথা গরম তো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।আমাদের দেশ টা আরেকটু পূর্বে হলে ঠান্ডা হতাম।তাহলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কম হতো। ধুর কি যে ভাবছি এসব,এসব বড় বড় মাথাওলাদের চিন্তা।আমার ভেবে কাজ নাই,আমার নিজেরই নাই একটা চাকরি, বেকারদের মাথাতেই কেবল এসব আজগুবি চিন্তা আসে.দূরে ডেকচিতে ভাত আর মাছ বিক্রি করছে।একপ্লেট ২০ টাকা।খিদায় পেটে বারি মারছে,আছে তো মাত্র ৬ টাকা।না হবেনা।কেন যে এত গরিব হলাম।এত গরিব কে কেউ বিয়েও করবেনা।বিয়ে তো দুরের কথা ভালো ও বাসবেনা। সখ কতো। পকেটে নাই পয়সা।গরিবের ঘোরা  রোগ,ক্ষিদায় কিছুই ভালো লাগছেনা।কিছু খাওয়া দরকার।কি যে করি,কোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে কিছু টাকা ধার নিতাম।রাস্তায় তো পরেও থাকে টাকা পয়সা,মানি ব্যাগ, যদি কুড়িয়ে পেতাম।খাওয়া টা তো অন্তত হবে,কোনো বন্ধুর বাসায় গেলে কেমন হয়, খাওয়া বা টাকা একটা কিছু হবে,টিপুর বাসা থেকে ফিরছি,ও বাড়িতে নাই,দরকারের সময় কাওকে পাওয়া যাবেনা।

তত্বাবধায়ক এর আমলে অনেকে টাকার ব্যাগ ফেলে পালাতো। একটা ব্যাগ পেলেই তো কাম সারা।একেবারে কিস্তিমাত।১০ লাখ ,২০ লাখ,না ১০ লাখেই চলবে।টাকাটা পেলে আগে বসে একটা চার্ট করতাম।কি কি করব,কোথায় যাব,প্রথমেই ২ প্লেট বিরিয়ানি,বোরহানি,দই। খাসা করে একটা বেনসন ধরিয়ে পায়ের উপর পা তুলে চিন্তিত ভাব নিয়ে পাকা ব্যবসাইর মতো প্লান করতাম।
 চলবে।--------------------------------------------

.
আর ভালো লাগেনা,ও খোদা এত কষ্ট আমাকে কেনো দিচ্ছ।প্রতিদিন একই কাজ,সকালে বের হওয়া রাতে ফেরা।হাটতে হাটতে সান্ডেল এর  অবস্থা যাচ্ছেতাই।চাকরি টাকরি না পেলে রাস্তায় দাড়িয়ে কিছু বিক্রিও তো করা যায়.তার জন্যেও তো টাকা দরকার।কি যে করি,হাইকোর্ট মাজারে যাওয়া যেতে পারে,ওখানে দুপুরের খাবারটা খেতে পারবো ,শুনেছি ওখানে ফ্রি খাওয়া যায়.পকেটে পয়সা না থাকলে সারাক্ষণ পেটে ক্ষিদে লেগেই থাকে।
গিয়ে দেখি আজ কোনো খাবারের ব্যবস্থা হয়নি,কেউ কোনো কিছু বলতে পারলোনা,বেরিয়ে পরলাম ওখান থেকে।হাটতে হাটতে গুলিস্তান চলে এলাম।আরে বাহ এখানে তো এক মামা থাকে,সিদ্দিক বাজারের কাছে তার ওখানে যাওয়া যেতে পারে।তাকে পেয়ে গেলাম,মামা কুশলাদী জানতে চাইলো,আমি মিথ্যে করে বললাম,সামনের মাসে আমার একটা চাকরি হবে.শুনে মামা খুব খুশি হলো.আমাকে খেয়ে যেতে বললো। আমি মামাকে ব্যস্ততা দেখালাম,আমার অনেক কাজ আছে.যেনো দুনিয়ার সব কাজ আমার ঘাড়ে নেস্ত,যাওয়ার সময় মামার কাছে ২০০ টাকা চাইলাম।মামা আমাকে অপেক্ষা করতে বলে বেরিয়ে গেল.হায়রে টাকা।তোর্ জন্যে আমার সাধের প্রেমিকাও আমাকে ছেড়ে গেলো।হয়তো সুখেই আছে স্বামীর সংসারে।খেতেই পাইনা আবার প্রেম।দুনিয়ার কত মানুষের কতো কিছু হলো,আমার কিছুই হলনা।পোড়া কপাল আর কাকে বলে,এই কপাল টায় উষ্টা মারতে মন চায়.চেয়ে চেয়ে সব দেখছি।সবারই জীবনে উন্নতি হলো আর আমার কি কপালে কিছুই নাই?মামা সেই যে গেলো মামার আসার নাম নাই.ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেলো,মামার টিকিটিও দেখতে পাচ্ছিনা।শালায় আমাকে ছেকা মারছে,অশ্রাব্য গালি দিয়ে গুষ্টি উদ্ধার করে চলে গেলাম ওখান থেকে।
এখন ভ্যা ভ্যা করে কানতে পারলে ভালো লাগতো।পকেটে পয়সা না থাকলে মানুষের কাছে বোঝা ছাড়া কিছুই না.আপন মা,বাবাও দেখতে পারেনা।ধুর শালা যদি কোথাও চলে যেতে পারতাম !দুচোখ  যেদিক যায়.

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

আমাজান এর জঙ্গল----Amazon jungle

গ্রামের বাড়ি