চুরি করে যারা বিখ্যাত হয়েছেন ইতিহাসের পাতায়



কি ভাবছেন? চুরি করে কি বিখ্যাত হওয়া যায়, ঠিক এই ভাবনাটাই তো ভাবছেন তাই না? এও কি সম্ভব। মানুষ কতভাবেই তো খ্যাতি অর্জন করে। নিজের কর্মের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় লিখে রেখে যান সারা জীবনের জন্য। কেউ রাতারাতি বড়লোক হয়ে, কেউ মহৎ কোন কাজ করে, কেউবা প্রচন্ড সৌন্দর্য বা মেধার বিনিময়ে। অনেক সময় মানুষ খুন করেও কিন্তু বেশ পরিচিত আর ইতিহাসখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন কিছু ব্যাক্তি। কিন্তু চুরি করে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন এমন কারো কথা কি শুনেছেন কখনো? অবাক করা হলেও সত্যি যে চুরি করেও পৃথিবীর ইতিহাসে প্রচন্ড বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন কিছু মানুষ। চলুন দেখে আসি এমনই কিছু মানুষকে যারা চুরির মাধ্যমেই অদ্ভূত আর মজাদারভাবে অমর হয়ে রয়েছেন ইতিহাসে।

১. সোনার হাতের অধিকারী
রাশিয়ার আর দশটা সাধারণ নারীর মতনই ছিলেন সনকা আর সবার কাছে। কিন্তু এই ভালোমানুষীর আড়ালেই একের পর এক চমৎকার সব চুরি করে বেড়াতেন তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সনকা- দ্যা গোল্ডেন হ্যান্ড নামে পরিচিত এই নারী নানারকম মূল্যান পাথর চুরি করতেন। কখনো বানরের মাধ্যমে, কখনো লুকোনো পকেট বা জামার ভেতরে বয়ে বেড়াতেন সেগুলোকে। নিজের হাতের নখ সবসময়ই লম্বা রাখতেন সনকা। নখের নিচে তিনি বহন করতেন চুরি করা নানারকম ছোট ছোট মূল্যবান পাথর। তবে সনকার সবচাইতে অভিনব একটি চুরি হচ্ছে গহনা চুরির ঘটনা ( রিজেক্টেড প্রিন্সেস )। চুরিটি তিনি করেছিলেন একটি গহনার দোকানে। দোকানে গিয়ে অনেক দামী দামী নানারকম গহনা বাছেন সনকা। তারপর দোকানদারকে বলেন তার বাসায় সেগুলোকে নিয়ে আসতে। সেখানেই টাকা পরিশোধ করবেন তিনি। বাসায় তার স্বামী আছেন। যিনি পেশায় ডাক্তার। তিনিই পুরো টাকা শোধ করেন। দোকান থেকে বেরিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যান সনকা আর ডাক্তারকে বলেন তার স্বামী একটু পরেই কিছু গহনা নিয়ে আসবে। তিনি মারাত্মক অসুস্থ এবং যাকে দেখেন তার কাছেই গহনা কিনতে ও বেচতে চান। ডাক্তার যেন তাকে পাগলাগারদে ভরে দেন। স্বামীর চিকিৎসা বাবদ টাকাও পরিশোধ করেন সনকা ডাক্তারের কাছে। যথাসময়ে গহনা নিয়ে দোকানদার আসে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তাকে সনকা। দোকানদার গয়না দিয়ে টাকা চাইলে ডাক্তার মানসিক রোগী ভেবে হাসপাতালে ভরে দেয় তাকে। পুরো ব্যাপারটি সবার চোখের সামনে আসে এবং সত্যতা উন্মোচন হয় অনেক দিন পরে। তখন অবশ্য সনকা আর কারো হাতের নাগালে ছিল না।
২. ভিনসেনজো পিপিনো
ইটালির এই বিখ্যাত চোরের সাথে রবিন হুডের বেশ সাদৃশ্য ছিল। নিজের শহরকে বড্ড ভালো বাসতেন পিপিনো। শহরের কারো কোন ক্ষতি যেন না হয় তার কাজের মাধ্যমে সেটা খুব ভালো করে নজর রাখতেন তিনি। ভেনিসে জন্ম হয়েছির পিপিনোর। নিজের কাজ খুব সুন্দরভাবে করতেন তিনি। কখনো কোথাও কোন নোংরা করতে না। বলা হয়, কোন চিনির বাটি চুরি করতে গেলেও চিনিটুকু মেঝেতে বা ঘরের কোথাও না ফেলে বাইরে ফেলতেন তিনি যাতে করে ঘর অপরিষ্কার না হয়। কেবল বড়লোকদের ঘরেই চুরি করতেন পিপিনো। গরীবদের ওপর চাপ পড়বে এমন কিছু চুরি করতেন না তিনি। এই যেমন- ভেঙে যাওয়া কিছু অথবা মেরামতযোগ্য জিনিস সবসময়ই রেখে দিতেন পিপিনো। যাতে করে মেরামতকারীর টাকাটা মার না যায়। কোন ধরনের খুন-খারাবী পছন্দ করতেন না এই চোর। ব্ল্যাকমেইল বা শোরগোল এড়িয়ে চলতেন। নিজের দেশের সম্পদ নিজের দেশের ভেতরেই রাখতে পছন্দ করতেন। নিজের দেশের ছবি চুরি করলে সেটা দেশের কারো কাছেই বেচতেন কিংবা যার থেকে চুরি করেছেন তাকেই টাকার বিনিময় ফেরত দিতেন। তবে পিপিনোর সবচাই উল্লেখযোগ্য চুরিটা হয়েছিল ১৯৯১ এর ৯ অক্টোবর ( মিডিয়াম ডট কম )। সেদিন আর কিছু পর্যটকের সাথেই ডজের প্রাসাদে ঢোকেন তিনি আর সবার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যান একটি জেলের ভেতরে। পরে রাতের বেলা পাহারাদারদের সময় পরিবর্তনের সময় এলে আস্তে করে বেরিয়ে ম্যাডোনা কোল বাম্বিনো নামক ছবিটি দেয়াল থেকে চুরি করে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান।
৩. ভিনসেনজো পেরুজিয়া
ইতিহাসের পাতায় একটা চোরের নাম কম থেকে যেত যদি না পেরুজিয়া সেদিন তার এই চুরিটা করতো। ১৯১১ সাল ছিলো সেটা। পেরুজিয়া ল্যুভরের কাজ ছেড়েছেন অনেকদিনের কথা তখন। তবুও ল্যুভরের কর্মীদের পোশাকটা রয়ে গিয়েছিল তার কাছে। আর সেটাকে ব্যবহার করেই চরম একটি চুরি করার চেষ্টা চালান এই ইটালির মানুষটি। পরের দিন ছিল ল্যুভরের বন্ধ থাকবার দিন। সেটা মাথায় রেখেই আগের দিন জাদুঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। সব অলিগলি জানাই ছিল। ফলে লুকোতে কোন অসুইধা হয়নি তার। চুপ করে এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে গেলেন পেরুগিয়া যেখান থেকে তাকে কেউ খুঁজে বের করতে পারেনা। আর তার পরের দিন সেই জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রথম নিজের আকাঙ্ক্ষিত ছবির ঘরটির কাছে চলে আসলেন তিনি। আর সেটি ছিল বিখ্যাত লিওনার্দো না ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা ছবিটির ঘর। আশেপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে চট করে ছবিটা সরিয়ে ফেলেন পেরুজিয়া আর লুকিয়ে ফেরেন নিজের পোশাকের নীচে। এখন পর্যন্ত সবটা ঠিকই ছিল। বিপত্তি বাঁধলো বেরোবার সময়। ভুলেই গিয়েছিল পেরুজিয়া যে বাইরের দরজাটা বন্ধ থাকে এসময়। কপাল ভালো সেসময়ই একজন সীসা কর্মকার যাচ্ছিলেন পাশ দিয়ে। তিনিই দরজা খুলে ল্যুভরের কর্মীর পোশাক পড়া পেরুজিয়াকে বেরোতে সাহায্য করেন। ব্যস! খুব সহজেই এভাবে চুরি করে ফেললেন পেরুগিয়া বিখ্যাত মোনালিসার ছবিটি আর হয়ে গেলেন ইতিহাসের বিখ্যাত একজন চোর ( ডিসকভারি )!
তাহলে এখন কি ভাবছেন? বিখ্যাত হবার ইচ্ছে রয়েছে? ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটা অমর করে রাখার শখ হচ্ছে? তেমনটা ইচ্ছে থাকলে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে- চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড় ধরা!















Comments

Popular posts from this blog

আমাজান এর জঙ্গল----Amazon jungle

গ্রামের বাড়ি