রাত নেই থাইল্যান্ডের পা দেং গ্রামে!
ঢাকা: বনের গভীরে বসবাস করেও থাইল্যান্ডের পা দেং গ্রামবাসী একটি অসাধারণ বিকল্প শক্তির উৎস ব্যবহার করে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
সৌর প্যানেল ও গোবরজাত বায়োগ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ঘর-বাড়িকে দিন-রাত আলোকিত করে রাখেন তারা।
সৌর প্যানেল ও গোবরজাত বায়োগ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ঘর-বাড়িকে দিন-রাত আলোকিত করে রাখেন তারা।
এতে সফল হওয়ার পর গ্রামটি এখন দেশটির গ্যাসের ওপর বেশি নির্ভরশীল মানুষকে জীবাশ্ম জ্বালানির এ পরিচ্ছন্ন শক্তিকে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার আন্দোলনে নেমেছে।
এক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের জন্য সফলতা ও সুসংবাদেরও প্রতীক পা দেং গ্রামবাসী।
এক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের জন্য সফলতা ও সুসংবাদেরও প্রতীক পা দেং গ্রামবাসী।
পা দেং গ্রামের বাসিন্দারা কাঠের বাড়িতে বসবাস করে থাকেন, যেগুলোর অধিকাংশই নানা ফলের গাছের ছায়ায় বেষ্টিত। ঘরে ঘরে পালিত হয় গরু, যার মলের চুলায় রান্না-বান্না চলে। সৌর শক্তি ও গোবরের বায়োগ্যাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্যানেলও রয়েছে সব বাড়িতেই।
৪৪ বছর বয়সী উইসুট জানপারাপাই প্রথম গ্রামবাসী যিনি মল চুলার ব্যবহার শিখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘মায়ানমারে থাকা আমাদের এক বন্ধু আমাদের জানান, এর ক্ষমতা ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমে আমরা এটা বিশ্বাস করিনি’।
থাইল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্তের পা দেং গ্রামের পর্বতসারির পরেই মায়ানমারের অবস্থান। কিন্তু রাষ্ট্র সীমানার কারণে মায়ানমারের গাভী ও সারের প্রচুর প্রবেশাধিকার নেই থাইল্যান্ডে। তারপরও নিকটতম প্রতিবেশীদের কাছ থেকে উইসুট ও অন্যরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শিখে তার মূল্য বুঝতে পেরেছেন।
গ্রামীণ নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রায় একশ’ পরিবার বছর ধরে নীল বায়োগ্যাস বেলুনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলমান ছোট চুলাও ব্যবহার করছেন এখন।
বেলুনের পলিয়েস্টার বস্তায় মিথেন গ্যাস দিয়ে ভরাট করা হয়। পশু সার এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্যও বস্তাবন্দি করা হলে ভেতরে তা ভেঙে জ্বালানির উৎস হয়। এ প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যসম্মত এবং কাঠ পোড়ানোর চেয়ে বেশি টেকসই। বনের মধ্যে এটি তৈরি ও সংরক্ষণও করেন গ্রামবাসী।
‘এটি জটিল কিছু নয়। শুধু খাবার দিন এবং বর্জ্যে পরিণত করুন। তারপর গ্যাস আসবে’- ব্যাখ্যা করেন গ্রামীণ নেটওয়ার্কের নেতা কোশল সায়েনথং।
পা দেং গ্রামটি এখন সবুজ শক্তির একমাত্র উৎস। থাইল্যান্ডের বাকি অংশে প্রধানত তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর চলে।
পা দেং গ্রামটি এখন সবুজ শক্তির একমাত্র উৎস। থাইল্যান্ডের বাকি অংশে প্রধানত তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর চলে।
কিন্তু তার দরিদ্র প্রতিবেশীদের তুলনায় থাইল্যান্ড নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি নেতৃস্থানীয় বিনিয়োগকারী এবং আগামী পাঁচ বছরে ১২ থেকে ২৫ শতাংশ পরিষ্কার জ্বলন্ত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
থাইল্যান্ডের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নীতি বিশ্লেষক ফাইরাল ইনফ্যানিকও একমত যে, নিজস্ব এ সম্পদের ভালো ব্যবহার করা যেতে পারে। ‘থাইল্যান্ড নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসস্থল। আপনি যেকোনো স্থানে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে পদব্রজে ভ্রমণ করলেই নিজস্ব এসব সম্পদকে শক্তিতে পরিণত করার প্রক্রিয়া দেখতে পারবেন’- বলেন তিনি।
৩৮ বছর বয়েসী ফাইরাল ইনফ্যানিক বলেন, ‘একটি গর্ত করাসহ শক্তির খরচ কমিয়ে গ্রামবাসীকে সাহায্য করতে পারেন দেশবাসী। কোনো থাই যদি এখনও তাদের নিজস্ব শক্তির ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হন, শুধু একটি উদাহরণ হিসাবে পা দেং গ্রামের দিকে তাকান’।
প্রায় এক দশক আগে পা দেং গ্রামবাসী তাদের গ্রামে প্রথম বিদ্যুতের প্রথম ফ্ল্যাশ দেখেছিলেন, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা সৌর প্যানেল দান করেন। কিন্তু প্যানেলগুলো কয়েক বছর পর ভেঙে যেতে শুরু করে। কিন্তু সেগুলো মেরামতের কেউ ছিলেন না।
‘তাই আমরা নিজেরাই প্যানেল ঠিক করা শিখতে আমাদের নিজস্ব গ্রামবাসীকে পাঠাই। এখন সৌর প্যানেল এবং অন্যান্য সবুজ প্রযুক্তির মেরামত আমরা নিজেরাই করি’- বলেন দলনেতা কোশল।
এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র পা দেং এলাকায়ই সকল পরিবারের পঞ্চম নেটওয়ার্ক গঠিত হয়েছে। যারা সদস্যদের রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল এবং একটি কল্যাণ ফান্ড, পুকুর, চিকিৎসা ও জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য অর্থও।
উইসুট বলেন, প্রতিটি সৌর প্যানেল একটি পাখা, একটি টেলিভিশন এবং একটি বায়ো-গ্যাস বেলুন চুলাকে বিদ্যুতায়িত করছে। আমি মনে করি না, সেখানে এয়ার কন্ডিশনার বা একটি ফ্রিজ প্রয়োজন’।
Comments
Post a Comment