‘দীর্ঘায়ু জীবনসূত্রে’র খোঁজ মিলল যে গ্রামে
ইতালির ছোট্ট একটি গ্রাম আচ্চারোলি। এখানের অনেক বাসিন্দাই শতক হাঁকিয়েছেন। ক্রিকেটে শতক হাঁকানো খেলোয়াড়দের আলোচনা হচ্ছে না এখানে। বয়সে শত বছর পার করা ব্যক্তিদের কারণে এই ছোট্ট গ্রাম এখন বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আচ্চারোলি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ১ জন শতবর্ষ পার করেছেন। এই গ্রামে সাত শতাধিক লোকের বাস। সেই হিসাবে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ এখানে জীবনের ইনিংসে শতক হাঁকিয়েছেন। এমন একটি ছোট্ট গ্রামে একসঙ্গে এতজন শতবর্ষীর বসবাস—ঠিক এই বিষয়টাই গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছে বিজ্ঞানীদের।
ইতালির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কাম্পানিয়ায় সালেরনো প্রদেশের পল্লিকা শহরে অবস্থিত এই গ্রাম। শতবর্ষীদের এই গ্রামে ছয় মাস কাটানোর পর রোমের সাপিনেজা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্যানডিয়েগো স্কুল অব মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, এখানকার বয়স্ক লোকদের দেহের রক্ত সরবরাহব্যবস্থা তাঁদের বয়সের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে ভালো। আচ্চারোলির ৮০ জনেরও বেশি বয়স্ক বাসিন্দার রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে অবিশ্বাস্য হারে কম অ্যাড্রেনোমেডুলিন হরমোন পেয়েছেন তাঁরা। বয়সের সঙ্গে রক্তনালি প্রশস্ত হওয়ার জন্য এই হরমোন দায়ী।
গবেষকেরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের দেহে যে পরিমাণ অ্যাড্রেনোমেডুলিন হরমোন থাকে, আচ্চারোলির বয়স্ক লোকদের দেহেও তা প্রায় একই পরিমাণ পাওয়া গেছে। এই হরমোনের পরিমাণ বাড়লে রক্ত সংবহনতন্ত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
অবশ্য গবেষকেরা এখনো আচ্চারোলি গ্রামের বাসিন্দাদের দেহে বয়সের তুলনায় কম অ্যাড্রেনোমেডুলিন হরমোনের উপস্থিতির রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। তাঁরা মনে করছেন, এর পেছনে হয়তো খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে।
আচ্চারোলি গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয়ভাবে ধরা মাছ, গৃহপালিত খরগোশ আর মুরগি খেয়ে থাকে। এ ছাড়া তারা জলপাইয়ের তেল, বাড়িতে লাগানো সবজি আর ফল খায়। সেই সঙ্গে খায় চিরহরিৎ রোজমেরিসহ স্থানীয় নানা গুল্ম। ধারণা করা হয়, রোজমেরি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নতিতে সহায়তা করে।
স্যানডিয়েগোয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অব মেডিসিনের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যালান মাইসেল বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত, মস্তিষ্কের উন্নয়নে অ্যাসিড সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাদের খাবারে এই উপাদান যথেষ্ট। আমরা দেখেছি, আচ্চারোলি গ্রামের বাসিন্দারা জটিল কোনো রোগ, বিশেষ করে হৃদ্রোগ, স্থূলতা ও আলঝেইমারে আক্রান্ত হয় না। এমনকি তাদের চোখে ছানিও পড়ে না।’
অ্যালান মাইসেলের মতে, খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম ছাড়া আচ্চারোলি গ্রামের মানুষের দীর্ঘায়ুর আরও কারণ থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা খেয়াল করেছি, ওই গ্রামের মানুষেরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বয়সেও সঙ্গিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। কাজেই জীবনের আনন্দ আর নির্মল বায়ুও হয়তো এই দীর্ঘায়ুর কারণ।’
Comments
Post a Comment