বগালেক-কেওক্রাডংয়ে কী খাবেন, থাকবেন কোথায়

Boga Lake-keokradam what to eat, where to stay

বগালেক-কেওক্রাডংয়ে কী খাবেন, থাকবেন কোথায়



বগালেক-কেওক্রাডং ঘুরে: বান্দরবানের উত্তর-পূর্বের পাহাড়শ্রেণী মূলত ট্রেকারদের জন্য স্বর্গ। সব উঁচু চূড়া এ অঞ্চল ঘিরে। ট্রেকারদের দেখানো সেসব দুর্গম পথে হাঁটতে শুরু করেছেন শখের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরাও। শুধু পাহাড়ের টানে নয়, অসংখ্য ঝরনা ও জলপ্রপাতও টানে চুম্বকের মতো।
প্রথমে দু’একজন ট্রেকারের আবদার মেটাতে তাই রুমা থেকে বগালেক, কেওক্রাডং অঞ্চলে শুরু হয় স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। বছর দশেকের মধ্যেই ঘটে গেছে সব। ২০ টাকার থাকা আর ৫০ টাকার খাওয়া তাই পর্যটকদের ভিড়ে গিয়ে ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। পায়ে চলা জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথে পড়েছে যান্ত্রিক চাকার ছাপ।

রুমা যেহেতু বান্দরবানের একটি উপজেলা তাই সেখানে অল্প-বিস্তর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিলো আগে থেকেই। এখন সেটা বিস্তৃতি পেয়ে হয়েছে কিঞ্চিত উন্নত।

মূল সমস্যা ছিলো অন্যতম পর্যটক আকর্ষণের বগালেক। পাহাড়ের ১২শ’ ফুট উচ্চতায় স্বাদু পানির এ লেককেন্দ্রিক পর্যটন যার হাত ধরে এগিয়েছে তিনি সবার প্রিয় সিয়াম দিদি। স্কুল শিক্ষকতার পাশাপাশি ট্রেকারদের থাকা-খাওয়ার সামান্য ব্যবস্থা করে আস্থা অর্জন করেন তিনি। শুরু করেন নিজের বাড়িতে ২০ টাকায় থাকার ব্যবস্থার মাধ্যমে। পর্যায়ক্রমে সেই থাকার খরচ বেড়ে হয়েছে ১শ’ টাকা। এখন শুধু সিয়াম দিদি নন, রয়েছে আরও ১০-১২টি কটেজ। লেকের পাড়েও রয়েছে বেশ কয়েকটি। সব বাঁশের। কাঠেরও আছে কিছু কিছু। এক রুমে ১০-২০টি বেড, বালিশ। বেড হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়। সিয়াম দিদি স্বীকার করলেন, টাকা বেশি নিলে তো সেরকম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বেডও দিতে হবে। যেটা তাদের পক্ষে সত্যি কঠিন। কোনো রকম থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেই খুশি তিনি।

থাকার পাশাপাশি রয়েছে খাওয়ার ব্যবস্থাও। খাবারের মেন্যুতে খুব বৈচিত্র্য আনার সুযোগ তাদের নেই। আতপ চালের ভাত, আলু ভর্তা, ডিম, জুমের মিষ্টি কুমড়া, ডালই প্রধান। এছাড়া কালেভদ্রে মেলে পাহাড়িদের পালা দেশি মুরগি, বাঁশকোড়ল। সেটমেন্যুতে থাকে ভাত, ভর্তা, ডিম/মাংস। এছাড়া অতিরিক্ত কিছু যদি তারা যোগাড় করতে পারেন তাহলে দিতে হয় বাড়তি চার্জ। খরচ ১০০-১৫০ টাকা। সকালের নাস্তার ক্ষেত্রেও একই হিসাব। তবে অধিকাংশ সময় তারা যেটা আয়োজন করেন সেটাই খেতে হয় পর্যটকদের। কারণ সবকিছু অনেক কষ্টে, খরচ বেশি করে আনতে হয় লেক পর্যন্ত।

বাঙালি খাবার আয়ত্ত করতেও দিদির সময় লেগেছে বেশ। কারণ তেল মসলার খাবারে পাহাড়ি অভ্যস্ত না। বাঙালিদের কাছ থেকেই শিখেছেন তিনি। যখন পর্যটক বেশি থাকে তখন পাড়ার যেকোনো ঘর থেকে দুজন নারীকে ১ সপ্তাহের জন্য কাজে নেওয়া হয়। সপ্তাহ পেরুলে আবার অন্য দুজন। এভাবে কর্মস্থানের সুযোগও তৈরি করছেন দিদি।
কেউ যদি মুরগি খেতে চান তাহলেও আগে থেকে অর্ডার করা ভালো। তাহলে পাড়া থেকে খুঁজে অনেক সময় ব্যবস্থা করে দেন। যদি কারও থাকা-খাওয়ার ব্যাপারে ছুঁতমার্গ থাকে তবে তার না যাওয়াই ভালো।
বগালেকে এখন সিয়াম দিদি, লারাম, শিউলি বমসহ কয়েকজনের কটেজে ২শ’ জনও থাকা সম্ভব। কিন্তু কেওক্রাডংয়ে ভরসা একমাত্র লালা বমের কটেজ। কেওক্রাডং তার ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় বলেই জানে সবাই। সেখানে ২০০৮ সালে তিনি পর্যটকদের জন্য কটেজ তৈরি করেন। এর আগে সেভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিলো না। লালা বমের স্ত্রী ও ছেলে-বউ মিলেই রান্না-বান্নার কাজ করেন। থাকার জন্য রয়েছে দু’তিনটি কটেজ। এখানেও একই সিস্টেম। তবে ঠাণ্ডা বেশি হওয়ায় কম্বল আছে বেশি।

শহুরে মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিদ্যুৎ। ওই অজ পাহাড়ে তা না কল্পনা করাই ভালো। তবে সোলার আছে বগালেক-কেওক্রাডংয়ে। রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। আর ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস চাজ করার জন্য বগালেকে রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। ২০ থেকে ৫০ টাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে চাজ করা যাবে। আর কেওক্রাডংয়ে লালা দা’র সোলারই ভরসা
কেওক্রাডংয়ের খরচ বগালেকের চেয়ে একটু বেশি। বহন খরচও তো বেশি তাদের। তাই সব খরচের সঙ্গে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি যোগ করতে হবে এখানে। তবে আন্তরিকতার ঘাটতি পাবেন না কোথাও। পাহাড়ের মানুষগুলোর সরলতা আপনাকে মুগ্ধ করবে।







Comments

Popular posts from this blog

আমাজান এর জঙ্গল----Amazon jungle

গ্রামের বাড়ি