একটি ওয়েবসাইট দিয়ে উপার্জন করার ৭টি নির্ভরযোগ্য উপায় দেখুন





অনলাইনে আয়ের জন্য রয়েছে অসংখ্য উপায়। কেউ ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট করে আয় করছে, কেউবা করছে গ্রাফিক ডিজাইন, আবার এমন অনেকেই রয়েছে যারা আয় করছে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে। এখন ব্লগিং অনলাইন আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উপায়ে পরিণত রয়েছে। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রেও আয়ের বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। তবে এ বিষয়গুলি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই বিশেষ করে যারা নতুন ব্লগার তাদের তেমন স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। এ বিষয়টির কথা ভেবেই আজ আমি আলোচনা করেছি ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয় করার ৭টি নির্ভরযোগ্য উপায় নিয়ে। আশা করি এ আলোচনাটি নতুন ব্লগার এবং যারা ইতিমধ্যেই ব্লগিংয়ের সঙ্গে কিছুটা জড়িত তাদের সকলের জন্যই সহায়ক হবে।

১. গুগল এডসেন্স


অনলাইনে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় গুগল এডসেন্স। এটি অনলাইনে আয়ের একটি সহজ উপায়। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরী করে গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। গুগল এডসেন্সের সমস্ত শর্তাদি পূরণ করলে আপনার এডসেন্স একাউন্টটি এক্টিভেট হবে। এরপর আপনাকে আপনার এডসেন্স একাউন্টে প্রবেশ করে গুগলের বিজ্ঞাপনের কোড সংগ্রহ করতে হবে। এরপর এ কোডগুলি আপনার সাইটে বসিয়ে দিতে হবে। তাহলেই গুগল এডসেন্সের বিজ্ঞাপন আপনার সাইটে প্রদর্শিত হবে। বিজ্ঞাপনগুলি অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। এক্ষেত্রে গুগল ক্রলার আপনার সাইটের কীওয়ার্ডগুলি খুজে বের করে এবং সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গুগল এডসেন্সের নিয়মাবলী সঠিকভাবে মেনে চলা। যেমন আপনি আপনার নিজের সাইটের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবেন না, তাছাড়া নিজের বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কাউকে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে বলবেন না। গুগল টার্মস কন্ডিশনের ব্যাপারে খুবই কঠোর। সুতরাং গুগল এডসেন্সের নিয়মকানুন সঠিকভাবে মেনে ব্লগিং করলে আপনি এখান থেকেও অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

২. এফিলিয়েট মার্কেটিং


অনলাইনে আয়ের একটি কার্যকরী উপায় হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং। এফিলিয়েশন হচ্ছে এমন একটি প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে আপনি কোন কোম্পানীর প্রোডাক্ট বিজ্ঞাপন হিসাবে আপনার সাইটে প্রদর্শন করে ঐ কোম্পানীকে সেগুলি অনলাইনে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিযে কমিশনের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। আপনার সাইটের রেফারেল লিঙ্ক থেকে যদি ঐ কোম্পানীর কোন প্রোডাক্ট বিক্রি হয় তাহলে ঐ কোম্পানী বিক্রয়ের উপর আপনাকে একটা কমিশন দেবে। তবে এফিলিয়েশন প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভাল একটি কোম্পানীর প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে হবে। কারণ যেকোন গ্রাহক প্রোডাক্ট কেনার সময় ভালো একটি নামী কোম্পানী থেকেই কিনতে চায় যার গ্রাহকদের ভালো সার্ভিস প্রদান করে। তাছাড়া এমন একটি প্রোডাক্ট বাছাই করতে হবে যেটির অনলাইনে বিক্রি হবার সম্ভাবনা বেশি। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে Amazon, clickbank এবং Ebay এই গুলি বিখ্যাত অনলাইন কোম্পানী।

৩. ডিরেক্ট এডভারটাইজমেন্ট: ব্যানার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা


আপনার ব্লগটিতে যদি অনেক ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি এ পদ্ধতিতে আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সাইটে ব্যানার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারেন। আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়লে আপনার সাইটের বিজ্ঞাপনদাতা আরও বেশি পরিমান অর্থ প্রদান করতে আগ্রহী হবে। তবে এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে আপনি নিজে বিজ্ঞাপনের মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। আপনি ২৫০x২৫০ সাইজের একটি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে প্রতিমাসে ৫০ ডলারও আয় করতে পারবেন। তবে আপনার সাইটের ভিজিটর যদি বেশি হয়ে তাহলে আপনি বিজ্ঞাপনের মূল্য আরও বেশি নির্ধারণ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যেটি সমস্যা সেটি হল আপনাকে নিজে বিজ্ঞাপন খুঁজে পেতে হবে। বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য আপনি বিভিন্ন কোম্পানীতে প্রোপোজাল লেটার পাঠাতে পারেন। আপনার সাইটে ভিজিটর থাকলে নিশ্চিতভাবেই আপনি বিজ্ঞাপন পাবেন এবং ভিজিটর যত বাড়বে তত আপনার বিজ্ঞাপনের মূল্যও বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

৪. ই-বুক বিক্রয় করা


ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয়ের আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে ই-বুক বিক্রি করা। আপনি যেকোন  একটি চাহিদা সম্পন্ন বিষয় যেটি আপনি ভালো পারেন সেটি নিয়ে লিখতে পারেন। সেটি হতে পারে অনলাইনে কোন কাজের টিউটোরিয়াল অথবা অন্য যে কোন বিষয়। যেমন আপনার যদি ফটোগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে আপনি এ বিষয়টি নিয়ে লিখতে পারেন। এটির সঙ্গে বিভিন্ন ক্যামেরার খুটিনাটি তথ্য, ব্যবহারের নিয়মাবলী যুক্ত করতে পারেন। বর্তমানে অনেকেই রয়েছেন যারা ই-বুক লিখে বেশ ভালো অংকের অর্থ উপার্জন করছেন।

৫. ফিচারড ব্লগ পোস্ট


ফিচারড ব্লগ পোস্ট লেখার মাধ্যমেও আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কোন ব্লগে বা কোন আর্টিকেল ডিরেক্টরীতে কোন কোম্পানীর প্রোডাক্ট সম্পর্কে লিখতে হবে। এতে ঐ কোম্পানীর পণ্যের আরও প্রসার হবে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আপনার লেখার মাধ্যমে ঐ কোম্পানীর সাইটটি আরও একটি ডুফলো ব্যাকলিংক পাবে। বিষয়টি আরেকটু সহজভাবে বলা যেতে পারে। ধরুন কোন কোম্পানী অনলাইনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করে। সুতরাং আপনি ঐ কোম্পানীর কোন একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের গূনাগুণ ও কার্যকারীতা নিয়ে লিখতে পারেন। এটি কোম্পানীটির প্রোডাক্টগুলি বিক্রয় বাড়াতে সহায়ক হবে। আপনি প্রতি ফিচারড ব্লগ পোস্টের জন্য ২৫ ডলার পেতে পারেন। ফিচারড ব্লগ পোস্ট লেখার জন্য আপনি বিভিন্ন কোম্পানীতে প্রপোজাল লেটার পাঠাতে পারেন্। এমনও হতে পারে তারা আপনাকে ব্লগ লেখার পাশাপাশি আপনার সাইটে প্রদর্শন করানোর জন্য বিজ্ঞাপনও দিতে পারে।

৬. সিটিকার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা


আপনার যদি গুগল এডসেন্সের একাউন্ট না থাকে তবে আপনি ‍(Chitika) সিটিকার বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। সিটিকাও এডসেন্সের মত বিভিন্ন পাবলিশার সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এটির পেমেন্ট রেট এডসেন্সের তুলনায় সামান্য কিছুটা কম হলেও তা একদম খারাপ নয়। তাছাড়া এটির বিজ্ঞাপন পাওয়াও খুব কঠিন নয়। আপনি কোন একটি বিষয়বস্তুর ‍উপর আপনার ব্লগে কিছু পোস্ট দিযে সিটিকার বিজ্ঞাপন পেতে পারেন। তবে আমেরিকা বা কানাডার ভিজিটর আপনার সাইটে আসলে বিজ্ঞাপনের পেমেন্ট রেট তুলনামূলক বেশি পাবেন।

৭. ব্যাকলিঙ্ক বিক্রি করা


আপনি ব্যাকলিঙ্ক বিক্রি করার মাধ্যমেও আয় করতে পারেন। ব্যাকলিঙ্ক কি সেটা নিশ্চয় আপনি জানেন। তারপরও একটু মনে করিয়ে দিই, যদি আপনার সাইটের লিঙ্ক অন্য কোন সাইটে থাকে তবে সেটি হবে আপনার সাইটের ব্যাকলিঙ্ক বা ইনকামিং লিঙ্ক। আর অন্য যে সাইটটি থাকবে সে সাইটটির জন্য এ লিঙ্কটি হবে আউটগোয়িং লিঙ্ক। সুতরাং ঐ সাইট থেকে যদি কোন ভিজিটর এই লিঙ্কে ক্লিক করে তাহলে সে আপনার সাইটে চলে আসবে। এটি নিশ্চয় জানেন কোন সাইটের ব্যাকলিঙ্ক যত বেশি থাকবে সেই সাইটের ভিজিটর আসার সম্ভাব্যতাও তত বেশি থাকবে। তাছাড়া সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্টেও সাইটটি তত উপরে থাকবে। যদি আপনার সাইটটি জনপ্রিয় হয তবে আপনার সাইটে আপনি অন্য সাইটের জন্য ব্যাকলিঙ্ক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাকলিঙ্কের জন্য আপনি ১৫-২০ ডলার করে পেতে পারেন। তবে এজন্য আপনি নিজেকে একজন দক্ষ ব্লগার হিসাবে গড়ে তুলবেন। তাহলে যার আপনার সাইট থেকে ব্যাকলিঙ্ক পেতে চায় তার আপনার উপর তত বেশি আস্থাবান হবে।


Comments

Popular posts from this blog

আমাজান এর জঙ্গল----Amazon jungle

গ্রামের বাড়ি